না’গঞ্জবাসীর পক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ড. জেবউননেছার খোলা চিঠি
ড. জেবউননেছা, প্রেসবাংলা২৪ডটকম:
১৬.০৪.২০২০ইং
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
প্রথমেই নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হতোনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনি জানেন, বাংলাদেশের প্রাচীনতম সংগঠন ‘বাংলাদেশ’ আওয়ামী লীগের জন্ম এই নারায়ণগঞ্জে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে নারায়ণগঞ্জবাসীর সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রাচীন এই নগরীর একজন সন্তান হিসেবে আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাকে আজ লিখছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
এই কয়দিন অপেক্ষায় ছিলাম, আপনি কবে নারায়ণগঞ্জের ‘করোনা পরিস্থিতি’ নিয়ে কথা বলবেন। আজ সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে।আপনি উদ্বিগ্ন হয়েছেন, নারায়ণগঞ্জে এখনো একটি গবেষণাগার নেই। রাজধানীর উপরই নারায়ণগঞ্জ নির্ভরশীল। হ্যাঁ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমিও আপনার মতো বিস্মিত হয়েছি। আমি সব সময় গর্ব করি, আমি নারায়ণগঞ্জের সন্তান। আজ শুধু একটি প্রশ্নই মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, এই নারায়ণগঞ্জে করোনা টেষ্ট করার জন্য গবেষণাগার নেই। যেই নারায়ণগঞ্জ ভীষণভাবে করোনায় আক্রান্ত, সেই নারায়ণগঞ্জের ডাক্তার এখনো N-95 মাস্ক পাননি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমার ভালবাসার শহর নারায়ণগঞ্জ আজ মরণঘাতী করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত। নারায়ণগঞ্জবাসী আজ আতংকিত, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আতংকিত। কারণ আমাদের মা বাবা আত্মীয় স্বজন পরিজন নিয়ে এই নারায়ণগঞ্জে বাস করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনার কঠোর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জকে বাঁচানো ছাড়া আর বিকল্প নেই। আমাদের নারায়ণগঞ্জে একটি করোনা টেষ্ট ল্যাব প্রতিষ্ঠা করে আমাদের বাঁচান। আপনার হস্তক্ষেপ ছাড়া আমাদের নারায়ণগঞ্জবাসীকে বাঁচানো কঠিন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
দুঃখের সাথে বলতে হয় প্রাণের এই শহরে মেডিকেল কলেজ নেই করোনা টেস্টের ল্যাব নেই, উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় নেই, মেট্রোপলিটন পুলিশ নেই। অথচ দেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি এই নারায়ণগঞ্জের। আপনি সকল জেলা উন্নয়নের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এদিক দিয়ে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী আজ ভীষণভাবে অবহেলিত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ করোনা মুক্ত বাংলাদেশে আপনি আমাদের নারায়ণগঞ্জ সফর করুন। আমাদের নারায়ণগঞ্জবাসীর কথা শুনুন। আমরা জানি, আপনি জনগণের জন্য অন্তপ্রাণ। আমাদের নারায়ণগঞ্জ বাসী আপনার দোয়ায় নিশ্চই একদিন আমাদের যে চাওয়া আছে তা পূরণ হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন, নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের ধনী জেলার তালিকায় ১ম, বাংলাদেশের ২য় ক্ষুদ্রতম জেলা, বাংলাদেশের ৭ম সিটি কর্পোরেশন, বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তর বাণিজ্যিক নগরী, প্রাচ্যের ডান্ডি, বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন (ঢাকা-চট্টগ্রাম) মহাসড়ক এর দিয়েই অবস্থিত, সমগ্র চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগের যানবাহন ও বরিশাল বিভাগের সকল লঞ্চ এই জেলার দিয়েই চলমান, রাজধানী ঢাকার ১টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সহ ২টি বিমান ঘাটির জ্বালানী সরবরাহ হয় এই জেলা থেকে, দেশের ২য় বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার নিতাইগঞ্জ এখানেই অবস্থিত, আমাদের সিদ্ধিরগঞ্জ, মে ঘনাঘাট, মদনগঞ্জ, হরিপুর, পাগলা, কাশীপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোই জাতীয়গ্রিডের বৃহত অংশের যোগানদাতা, পৃথিবীর ১ম এবং ২য় সর্বশ্রেষ্ঠ ২টি পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা (রেমী হোল্ডিংস্ ও প্লামি ফ্যাশন) এ জেলাতেই অবস্থিত, প্রাচীন বাংলার রাজধানী ঐতিহাসিক সোনারগাঁও এই নারায়ণগঞ্জেই, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর জন্ম এই নারায়ণগঞ্জেরই পাইকপাড়া মিউচুয়াল ক্লাবে, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ফ্লাওয়ার মিল (শম্পা ফ্লাওয়ার মিল) এই নারায়ণগঞ্জেই, অবিভক্ত পুর্ব বাংলার সর্বপ্রথম মিটারগেজ রেলপথ শুরু হয় এই নারায়ণগঞ্জ থেকেই, বাংলার প্রথম ডাক ও টেলিফোন সার্ভিস এর সুতিকাগার এই নারায়ণগঞ্জ, মসলিন ও জামদানীর পীঠস্থান এই নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশন, বি জে এ, হোসিয়ারি মালিক সমিতি, বি কে এম ই এ, সহ আরো অনেক সদরদপ্তর নারায়ণগঞ্জ,দেশের সর্ববৃহৎ নদীবন্দর নারায়ণগঞ্জ, দেশের নীট তথা তৈরী পোশাকশিল্পের জন্মভুমি এই নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশের প্রথম রপ্তানিকৃত বাণিজ্যিক জাহাজ স্টেলা মেরিস তৈরী হয়েছিল এই নারায়ণগঞ্জেই, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সার এর মোকাম এই নারায়ণগঞ্জ, দেশের ৩য় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম, বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি মেরিন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, দেশের সিমেন্ট, ইস্পাত তথা নির্মাণ শিল্পের সিংহভাগ উৎপাদন ও সরবরাহ হয় এখান থেকেই, বাংলাদেশ যখন নীট পোশাক উৎপাদনে বিশ্বের ২য়। তখন নারায়ণগঞ্জ দেশের মোট নীট পোশাক এর ৭০% সরবরাহ করে থাকে, নারায়ণগঞ্জ এককভাবে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের মোট ২০% অর্থ সরবরাহ করে থাকে, বাংলাদেশের ১ম ডেমু (ডিজেল ইলেক্ট্রিক মাল্টিপল ইউনিট) ট্রেন এর উদ্বোধন হয়েছিল এখান থেকেই, ফকির গ্রুপ, ACI, সৃজন হাউজিং লিমিটেড, রহিম ষ্টীল, আদমজী ইপিজেড, সুপার স্টার, প্যারাডাইস, এসরোটেক্স, নীট কনসার্ন, আনন্দ শিপইয়ার্ড এন্ড স্লিপওয়েজ, মোল্লা সল্ট, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, BSI এর মত আরো অনেক স্বনামধন্য শিল্প পরিবারের শুরু এখান থেকেই, অবিভক্ত বাংলার প্রথম ক্লাব ছিল ইংলিশ ক্লাব যা বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব নামে পরিচিত, আসলেই গর্ব করার মত আমাদের নারায়ণগঞ্জ।অথচ সেই নারায়ণগঞ্জ আজ করোনা আক্রান্ত হয়ে মুষড়ে পড়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনি এই বাংলাদেশকে পৃথিবীর একটি অন্যতম রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমাদের নারায়ণগঞ্জে যে অপূর্ণতা রয়েছে আমাদের যে দাবি রয়েছে, সেই দাবীগুলো পূরণের জন্য আপনার সুদৃষ্টি কামনা করছি। ইংল্যান্ডের টেমস নদীর পরে হারবারবেষ্টিত নদী শীতলক্ষ্যা নদীর অবগাহন করে বড় হয়েছি আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমাদের প্রাণের চাওয়াগুলো, শীতলক্ষ্যা নদীর মতো নীরবে বহমান আপনার দিকে। আপনি ঝর্ণা হয়ে শীতলক্ষ্যা নদী বেষ্টিত নারায়ণগঞ্জকে আমাদের দাবীর প্রতি সুনজর দিন। আমরা চির কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব আপনার কাছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
জাতির জনক আমাদের এই প্রিয় শহরকে ভালবাসতেন। তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’য় অনেকবার নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দের কথা উল্লেখ করেছেন।বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য এই নারায়ণগঞ্জকে আপনি আপনার স্নেহের ছায়াতলে ঠাঁই দিন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
লক্ষ্যা বিধৌত নারায়ণগঞ্জ শহর, প্রাচ্যের ড্যান্ডি শ্রেষ্ঠ নদীবন্দরে আপনি কখনো পদধূলি দিলে, আপনার মন খারাপ হবে। কারণ সাইনবোর্ড পেরিয়ে বিশ্বরোডের জালকুড়িতে রাস্তার পাশে বিশাল জায়গাজুড়ে অপরিকল্পিত ময়লার ভাগাড়, যার দুর্গন্ধে নারায়ণগঞ্জবাসী আজ চরমভাবে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে ক্ষতির সম্মুখিন। নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ বিপন্ন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
নারায়ণগঞ্জ সম্প্রীতির শহর, এখানে রয়েছে সকল ধর্মের মহামিলন। ঈদ, পূজা পার্বণে নারায়ণগঞ্জবাসী সকলে মিলে আনন্দ উদযাপন করে থাকে। দুর্গাপূজার সময় দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জবাসী কতটা সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ।অতিথিপরায়ণ নারায়ণগঞ্জকে আজ ‘করোনা’ ভাইরাসের এপিসেন্টার বলা হচ্ছে। শিল্প নগরীতে দেশ বিদেশের বিভিন্ন মানুষের আবাস থাকবেই। আর এজন্য দরকার সচেতনতা। আপনি আপনার বক্তব্যে ও বলেছেন, সকলকে সচেতন হয়ে চলতে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
বাড়িয়ে বলছিনা, করোনার এই যুদ্ধে বিশ্বের আর কোন রাষ্ট্রপ্রধানকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করার নজির নেই। যে নজির আপনি দেখিয়েছেন। আপনি এখন বিশ্বমানের নেতা, যাকে অনুসরণ করে সবাই। নারায়ণগঞ্জবাসী গর্বিত আপনাকে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেয়ে। আপনার দূরদর্শিতা আমাদেরকে আকৃষ্ট করে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
এই নারায়ণগঞ্জের আলোবাতাসে বড় হয়েছি আমরা। তার কিছুটা ঋণ পরিশোধ করার জন্য আজ আপনার কাছে লিখছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমাদের বেশি কিছু চাওয়ার নেই, আমাদের একটি মেডিকেল কলেজ, একটি বিশ্ববিদ্যালয়, জালকুড়ির ময়লার ভাগাড়কে পরিকল্পিতভাবে অন্যত্র স্থানান্তর এবং করোনা টেষ্ট ল্যাব এই কয়টি চাওয়া পূরণ করে দিলে আমরা আজীবন কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব। আপনি মাদার অফ হিউম্যানিটি, আপনি তাকালে ভাল থাকে বাংলাদেশ। আপনার কথা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকি।আপনার দিক নির্দেশনার জন্য অপেক্ষায় থাকি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে আপনাকে আবার ও সশ্রদ্ধচিত্তে সালাম জানাই। আপনার দীর্ঘজীবন কামনা করি। আপনার দিকে তাকিয়ে আছি আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী। আপনি আপনার সহৃদয়তা দিয়ে আমাদের দাবীগুলোর সুবিবেচনার জন্য বিনীত আবেদন করছি।
আপনার বিশ্বস্ত
আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী।
পক্ষে
ড. জেবউননেছা
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
লোকপ্রশাসন বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
এবং
নির্বাহী সদস্য
নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতি
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিও আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, [email protected] ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)