একটি দুষ্টচক্র ও করোনার প্রভাব

মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ: ঘর থেকে রাস্তার গলির মোড়, চায়ের দোকান, স্কুল-কলেজ, সরকারী প্রতিষ্ঠান এমনকি ধর্মীয় উপসনালয় সর্বত্রই একই আলোচনা-করোনা। সর্বত্র করোনার প্রভাব। সর্বত্র করোনার ছাপ। আলোচনা, গাল-গপ্পোরও শেষ নেই। সর্তকতা আছে, তবে গুজব ও আজগুবি আলোচনাও কম নেই।
বিশ্বব্যাপী ঝড়তোলা মরণব্যাধী করোনা নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। চীন থেকে শুরু হয়ে করোনা এখন বিশ^ব্যাপী এক আতঙ্ক। আমাদের দেশেও কয়েকদিন আগে তিনজন করোনায় আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছেন। ইটালি থেকে দেশে ফিরে নিজেরাই নিশ্চিত হতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) হটলাইনে ফোন দেন। প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত হবার পরে তাদের করোনা আক্রান্ত বলে সরকারীভাবে ঘোষণা দেয়। আক্রান্ত তিনজনই নারায়ণগঞ্জের। এরপর থেকেই নারায়ণগঞ্জে এক ধরণের আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আতঙ্ক নয় সচেতন হতে। নারায়ণগঞ্জে একটি ৫০ শয্যার কোয়ারেন্টাইন সেন্টারও প্রস্তুত করা হয়।
কিন্তু এরপরের গল্পটা আরও করুণ। তিনজন রোগী সনাক্ত হবার পর থেকে শুরু হয় একধরণের হুজুগ। এ খবরে আতঙ্কগ্রস্থরা মাস্ক ও হ্যা-স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য দ্রব্যের উপর হামলে পড়ে। তবে বাজারের খবরটা আরো পীড়াদায়ক। ৫ টাকা মূল্যের একটি মাস্ক ৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। এমনকি ১৫০ টাকায়ও কিনেছেন কেউ কেউ। অন্যান্য দ্রব্যগুলোই আকাশ ছুঁয় দামে। সাধারণ মানুষগুলো যেন অসহায়। একদিকে করোনার আতঙ্ক অন্যদিকে এই দুষ্টচক্রের কারসাজি। কোথায় যাবে সাধারণ মানুষ? এইতো গেলো দুষ্টচক্রের মানুষের আতঙ্ককে পুঁজি করে ব্যবসার হালচিত্র। অন্যদিকে করোনাকে উপলক্ষ্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এক ধরণের দুষ্টচক্রের আর্বিভাব ঘটেছে। প্রত্যেকেই যেন-এক একজন বিশেষজ্ঞ। নিজের মতো করেই প্রচার করে চলেছেন-এ সংক্রান্ত নানা বিষয়। শুধু তাই নয়, ট্রল করতেও একটু ভুল করেননি অনেকেই।
বিষয়টা এমন-সুযোগেই যেন সুযোগ খুঁজে এ জাতি।
এ বিষয়ে একজন প্রবীণ ব্যক্তির একটা কথা এই মূর্হুতে বেশ মনে পড়ছে। গল্পের ছলে তিনি বলতেন,‘ একবার এক ডাক্তার মাছ বিক্রেতার কাছে গেলেন। তখন মাছ বিক্রেতার মনে হলো এই ডাক্তার তার পকেটে কেটেছিলেন। তখন তিনিও সুযোগ বুঝে ওই ডাক্তারকে কেটে দিলেন। সেই মাছ বিক্রেতাও একদিন মুদি দোকানীর কাছে গেলেন। মুদি দোকানীর মনে পড়ল, এই মাছ বিক্রেতা তাকে পচাঁ মাছ দিয়েছিলেন বেশি দামে। তিনিও সুযোগটা হাতছাড়া করলেন না। এই মুদি দোকানী একদিন প্রকৌশলীর কাছে গেলেন। প্রকৌশলীর মনে পড়ল, আরে এই ব্যাটা আমাকে দামে ও ওজনে ঠকিয়ে ছিলো। প্রকৌশলীও কাগজ-কলমের খোঁচায় জেদটা নিংড়ে নিলেন।’
প্রবীণ ওই ব্যক্তিটি বলতেন, এভাবেই আমাদের দেশে একটি পরস্পরবিরোধী একটি দুষ্টচক্র তৈরি হয়েছে। একে অপরকে শুধু ঠকিয়ে ঠকিয়ে আরও নতুন নতুন ঠকানোর সুযোগে ওৎ পেতে থাকি। অপেক্ষায় থাকি একটা সুযোগের। বিপরীতে সুযোগের অপশিকারের। আমাদের আসলে করোনা লাগে না, লাগে একটা উপলক্ষ্য; মোক্ষম সুযোগ। সুযোগেই যেন বেরিয়ে আসি-আসল আমরা।
মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ
ছড়াকার ও সংবাদকর্মী