ডিবি পরিচয়ে অপহরণচক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার

নগর প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: র‌্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার দিবাগত রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

 

তারা হলেন অভিত মিয়া (২৮), মো, পাপ্পু মিয়া (২৮), মারিয়া আক্তার মন্টি (২৩) ও মো. বাদল মিয়া (৫৮)। গ্রেফতারকৃত আসামিরা নরসিংদী জেলার সদর থানার স্থায়ী বাসিন্দা।

 

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপউদ্দিন জানান, গত ২০ ফেব্রুয়ারি মো. রাসেল (২৮) নামক এক ব্যক্তি র‌্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জ বরাবর একটি অভিযোগ করেন যে, গত ২৮ ডিসেম্বর তাকে ডিবির পরিচয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ব্যক্তি নরসিংদী আদালতের সামনে থেকে মাইক্রোবাসযোগে তুলে নিয়ে যায়।

 

চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করে অবচেতন করে সেখান থেকে তাকে একটি ফ্লাট বাসায় নিয়ে হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধর করা সহ বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতন করে এবং সেই নির্যাতনের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে। ভিকটিম রাসেলকে জিম্মি করে হত্যার হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১১ কর্তৃক গোয়েন্দা নজরদারী ও গোপন অনুসন্ধানের মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা পায়।

 

ভিকটিম মো. রাসেলকে (২৮) অপহরণের বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদানসহ অন্যান্য আরও অপরাধের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।

 

গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা অপহরণের উদ্দেশ্যে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে মাইক্রোবাসযোগে ঘুরে বেড়ায়। সুযোগ বুঝে বিভিন্ন এলাকার বিত্তশালী লোকদের অপহরণ করে চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করে অবচেতন করে গোপন স্থানে নিয়ে জিম্মি করে বিভিন্ন শারিরিক নির্যাতন করাসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মোটা অংকের টাকা মুক্তিপণ নিয়ে থাকে।

 

রাসেলের অপহরণ বিষয়ে তারা জানায়, ধৃত আসামিরা গত ২৮ ডিসেম্বর নরসিংদী আদালতের সামনে থেকে একটি মাইক্রোবাসযোগে ছদ্মবেশে ডিবি’র পরিচয় দিয়ে রাসেলকে অপহরণের উদ্দেশ্যে তুলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে চেতনানাশক ঔষধ প্রয়োগ করে অবচেতন করে তাদের ভাড়া করা একটি ফ্লাট বাসায় নিয়ে যায়। অতঃপর ওই বাসায় একটি গোপন কক্ষের ভিতর হাত-পা ও চোখ বেঁধে রাসেলকে মারধর করাসহ বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে এবং সেই নির্যাতনের ভিডিও তারা মোবাইলে ধারণ করে মুক্তিপণের ১০ লক্ষ টাকার জন্য রাসেলের পরিবারের কাছে পাঠায় এবং এই বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য রাসেলের পরিবারকে রাসেলের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

 

উল্লেখ্য যে, অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা ভিকটিম রাসেল এর গোপনাঙ্গ সিগারেট জ্বালানোর লাইটারের সাহায্যে পুড়িয়ে দেয়। রাসেলের পরিবার কোনো উপায় না পেয়ে রাসেল জীবন বাঁচাতে ঐদিন রাতে বিকাশের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা তাদের কাছে পাঠায় এবং বাকী টাকা নগদে পরিশোধ করবে বলে জানায়।

 

পরদিন ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখ রাতে অবশিষ্ট টাকা নেয়ার জন্য রাসেলকে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসযোগে নরসিংদীর শাপলা চত্তরে আসার পর রাসেল প্রস্রাব করা জন্য মাইক্রোবাস থেকে নামে এবং একটি পিকআপ ভ্যান সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় তৎক্ষণাৎ রাসেল ডাকাত, ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করে। তার চিৎকারে লোকজন আসতে থাকলে অপহরণকারীরা তাকে রেখেই দ্রুত পালিয়ে যায়।

 

পরবর্তীতে রাসেল তার পরিবারের লোকজনের মাধ্যমে হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিৎসার নেয়ার পর মোটামুটি সুস্থ হয়ে র‌্যাব-১১ বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করে। যার প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১১ এর একটি বিশেষ গোয়েন্দা দল কর্তৃক গোয়েন্দা নজরধারীর মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা পেয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে নরসিংদী সদর হতে সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের ৪ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করে।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com