কাউন্সিলর ফারুকের বিরুদ্ধে সড়ক নির্মাণে চাঁদাবাজির অভিযোগ
নগর প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তা নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী হাজী চান মিয়া। তার দাবি, টেন্ডার হওয়া ১২ ফুট রাস্তা ৮ ফুট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবিরও অভিযোগ তোলেন তিনি। চাঁদা না দেওয়াতে কেবল তার বাড়ির সামনের রাস্তাটির প্রশস্ততা কমিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার।
এদিকে কাউন্সিলর ওমর ফারুক পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, চান মিয়া নিজেই তার বাড়ির সামনের জায়গা ছাড়েন নাই। এই কারণে তার বাড়ির সামনে ৮ ফুট রাস্তা।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের হানিফ খান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চান মিয়ার ছেলে আলাল হোসেন, জামাতা শহীদুল ইসলাম।
চান মিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ডের পাইনাদী নতুন মহল্লা এলাকার একটি আরসিসি সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ কাজ নিয়ে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদ করায় আমার ক্ষতি সাধন করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে একটি মহল। ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুক সেই মহলের মূল হোতা। দীর্ঘদিন ধরেই কাউন্সিলর ফারুক ও তার পিতা ইউনুস মিয়া আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে আসছে তাদের অব্যাহত ষড়যন্ত্রে আমি ও আমার পরিবার ভয় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।
তিনি লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, ওয়ার্ডের পাইনাদী নতুন মহল্লা এলাকার ওই সড়ক নির্মাণ করা দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এলাকাবাসীর। তাই এলাকাবাসীর পক্ষে আমি সড়কটি নির্মাণ করার জন্য মেয়র বরাবর আবেদন করি। জনস্বার্থে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সড়কের নির্মাণ কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সড়কটির পাশে আমার দুইটি বাড়ি থাকায় কাউন্সিলর ওমর ফারুক নির্মাণ কাজে বাধা সৃষ্টি করে। অবশেষে সকল বাধা উপেক্ষা করে মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভীর আন্তরিকতায় সড়কটির নির্মাণ কাজের টেন্ডার আহবান করে সিটি কর্পোরেশন। ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ ফুট প্রশস্থ ও ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্য আরসিসি সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ কাজের টেন্ডার পায় মেসার্স কামাল ট্রেডার্স। সড়কটি ১২ ফুট প্রশস্থ করতে রফিকুল ইসলাম নামে একজনের বাড়ির ২ ফুট ভাঙ্গা পড়ে। কিন্তু রফিকুল ইসলাম কাউন্সিলর ফারুকের সাথে গোপন আঁতাত করে ২ ফুট ভাঙতে রাজি হয়নি। ফলে সড়ক নির্মাণ কাজটি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
চান মিয়ার অভিযোগ, বিষয়টি লিখিতভাবে সিটি মেয়রকে অবগত করালে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রকৌশলী সুমন দেবনাথকে দায়িত্ব দেন সরেজমিন পরিদর্শন করে সড়ক নির্মাণ কাজটি দ্রুত শেষ করতে। প্রকৌশলী সুমন দেবনাথ সরেজমিন পরিদর্শন না করে কাউন্সিলর ফারুকের সাথে আতাত করে মনগড়া প্রতিবেদন দেয়। এ বিষয়টি মেয়রকে অবগত করালে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রকৌশলী সুমন দেবনাথকে ৩ দিনের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করেন। পাশাপাশি ১০ দিনের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একজন সিটি কর্পোরেশন ও আরেকজন পাবলিক সার্ভেয়ারের উপস্থিতিতে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর মাপঝোপ করা হয়। এতে দেখা যায় বিদ্যমান ৮ ফুট সড়কের ৬ ফুটই আমার নিজস্ব জমিতে। নিয়ম অনুযায়ী রাস্তার দুই পাশের জমির মালিক সমান জমি ছাড়তে হয়। সড়কের উত্তর পাশের বাড়ির মালিক রফিকুল ইসলাম আমার সমপরিমান জমি ছাড়লে তার বহুতল ভবন ভাঙ্গা পড়বে। তাই আলোচনা সাপেক্ষে মানবিক বিবেচনা করে আমি একাই সড়কের জন্য ৮ ফুট জায়গা দিতে সম্মতি প্রদান করি। আর রফিকুল ইসলাম তার বাড়ির বারান্দা অংশ ভেঙ্গে ২ ফুট জায়গা ছাড়ার মত দিলে ১২ ফুট রাস্তা করার সিদ্ধাস্ত গ্রহন করা হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপস্থিত এলাকাবাসীর সামনে প্রকৌশলী সমুন দেবনাথ রফিকুল ইসলামের বাড়ির ২ ফুট ও আমার বাড়ির বাউন্ডারি দেয়ালের ২ ফুট ভাঙ্গার জন্য লাল দাগ দেন। কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। কাউন্সিলর ফারুক রফিকুল ইসলামের বাড়ি রক্ষা আর আমার বাড়ির ক্ষতি সাধন করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মেয়রকে ভুল বুঝায়। শেষ পর্যন্ত ১২ ফুটের পরিবর্তে ড্রেনসহ ১০ ফুট প্রশস্থ সড়ক নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়। আমি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেই। ফলে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু রাস্তা মাত্র ৮ ফুট প্রশস্ত করা হয়। তাও আমার বাড়ির সামনে আরো কম। তখন আমি প্রতিবাদ জানাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর ওমর ফারুক বলেন, রাস্তার টেন্ডার ১২ ফুটেরই হয়েছে এটা সত্য কথা। কিন্তু রাস্তার জন্য অনেকের বহুতল ভবন ভাঙ্গা পড়ে। তাই আলোচনা সাপেক্ষে ১০ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে।
কাউন্সিলরের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে চান মিয়া বলেন, রাস্তা নির্মাণে অনিয়ম করায় আমি প্রতিবাদ করেছি। আমার প্রতিবাদকে সড়ক নির্মাণ কাজে বাধা প্রদানের অপবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করে অপপ্রচার চালায় কাউন্সিলর ফারুক মহল।