৩৭ বছরে নারায়ণগঞ্জ
নগর প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলা হিসেবে ৩৭ বছরে পা দিয়েছে। বহু ইতিহাস ঐতিহ্যের ও গৌরবের এই জেলা ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে নিকটবর্তী জেলার স্বীকৃতি পায়।
৩৭ বছরে পা দেয়া এ জেলাটি রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্যে, ব্যবসায়, খেলাধুলায় অর্জন করেছে ঈর্ষনীয় সাফল্য।
শীতলক্ষ্যার কোলঘেঁষা শিল্প সমৃদ্ধ এ বন্দর নগরী এখন বাণিজ্যিক নগরী হিসেবেই দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। নিট গার্মেন্টস, সুতার ব্যবসা, হোসিয়ারী শিল্প, জাহাজ নির্মান প্রভৃতির জন্য সুপরিচিত নারায়ণগঞ্জ। এছাড়া, নিটওয়্যার রপ্তানিকারকদের সংগঠন -বিকেএমইএ, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশন, হোসিয়ারী মালিক সমিতিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। পৃথিবীর সেরা ৩টি পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানার ২টিই রেমি হোল্ডিংস ও প্লামি ফ্যাশনস এ জেলাতেই অবস্থিত।
শুধু তাই নয়, রাজধানী ঢাকার একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সহ ২টি বিমান ঘাঁটির জ্বালানী সরবরাহ হয় এই জেলা থেকে। সিদ্ধিরগঞ্জ, মেঘনাঘাট, মদনগঞ্জ, হরিপুর, পাগলা, কাশিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো জাতীয় গ্রিডের বৃহত অংশের যোগানদাতা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ (২০১৬) অনুসারে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম, ২ দশমিক ৬ শতাংশ।
২০১১ সালে দেশের ৭ম সিটি কর্পোরেশন হিসেবে তিনটি পৌরসভা যথাক্রমে নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল কে একীভুত করে ৭২.৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন।
বিশ্ব কারুশিল্প শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁকে।
নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় যে, ১৩০২ পূর্ব পর্যন্ত এই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ-ই ছিল বাংলার রাজধানী। পরবর্তীতে, বাংলায় সুলতানি শাসনামলেও স্বাধীন রাজ্যের রাজধানী এবং প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবেও সোনারগাঁয়ের গর্ব কিংবদন্তিতুল্য। সোনারগাঁকে কেন্দ্র করে সে সময় খিজিরপুর (বর্তমান নারায়ণগঞ্জ শহর), কদমরসুল ও মদনগঞ্জে গড়ে ওঠে বাণিজ্যিক অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক নদীবন্দর।
বাংলার প্রখ্যাত মসলিন কাপড়ের প্রধান উৎপাদনকেন্দ্র ছিল সোনারগাঁ। ইংরেজ আমলে এটি থান কাপড়ের ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হয়। যার ফলে গড়ে উঠে পানাম নগরী। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান হস্ত-শিল্প জামদানি শাড়ির উৎপাদন এখনও এই নারায়ণগঞ্জ ভিত্তিক।
এরপর, নারায়ণগঞ্জ পুনরায় জীবন ফিরে পায় ব্রিটিশদের আগমনের পর। পলাশী যুদ্ধের সময় এ অঞ্চলের ইংরেজ ব্যবসায়ীদের সাহায্য করার সুবাদে তাদের সুপারিশে ঢাকার নবাব রেজা খান এই এলাকার ভোগস্বত্ব ১৭৬৬ সালে ভীখন লাল ঠাকুরকে (যিনি বেনু ঠাকুর বা লক্ষী নারায়ণ ঠাকুর পান্ডে নামে পরিচিত ছিলেন) দান করেন। তখন নিজ দেবতার নামে তিনি এই জায়গার নাম পাল্টে রাখেন-‘নারায়ণগঞ্জ’।
১৮৭৬ সালে ব্রিটিশ সরকার নারায়ণগঞ্জকে আধুনিক শিল্প নগরীতে পরিনত করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা গঠন করে।
ইউরোপীয় এবং ভারতীয় কোম্পানির পাট ব্যবসার প্রাণকেন্দ্রে পরিনত হয় নারায়ণগঞ্জ। খ্যাতি পায় ‘প্রাচ্যের ডান্ডি’ হিসেবে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজী জুট মিল গড়ে তোলা হয় নারায়ণগঞ্জে। দেশের প্রথম টেক্সটাইল মিল ঢাকেশ্বরী কটন মিল, ১৯২৭ সালে গড়ে তোলা হয়েছিল এই নারায়ণগঞ্জেই।
এখানে আছে লোকশিল্প জাদুঘর, পানাম নগর, সোনারগাঁও, সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের সমাধি, বারদী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম, সুলতান জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ, বাবা সালেহ মসজিদ, বন্দর শাহী মসজিদ, কদমরসুল দরগাহ, গোয়ালদি মসজিদ, সোনাকান্দা দূর্গ, হাজীগঞ্জ দূর্গ, বিবি মরিয়মের সমাধিসহ ঐতিহাসিক আরও অনেক স্থান।
ভাষা আন্দোলনে, মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখা বহু মহান ব্যক্তির জন্মস্থান এই নারায়ণগঞ্জ।