প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ রাতে। শনিবার ১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়র, ১৬৭ কাউন্সিলরের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন দুই সিটি কর্পোরেশন ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণের ৫৪ লাখ ৫ হাজার ১০৯ ভোটার। আজ রাতেই ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ করে ভোটারের মর্জির ওপর নিজেদের ভাগ্য ছেড়ে দেবেন প্রার্থীরা।
এবারের সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে প্রধান দুই দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে। দুই সিটিতে মেয়র পদে মোট ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে দক্ষিণে সাতজন ও উত্তরে ছয়জন। দক্ষিণের সাতজন হলেন-আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বিএনপির প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, জাতীয় পার্টির হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আবদুর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির বাহারানে সুলতান বাহার, গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ। উত্তরে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, বিএনপির তাবিথ আউয়াল, সিপিবির সাজেদুল হক রুবেল, পিডিপির শাহীন খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফজলে বারী মাসউদ ও এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান।
কাউন্সিলররা নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন করলেও দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ফলে অঘোষিতভাবে পুরো নির্বাচনই হচ্ছে দলীয়ভাবে। ঢাকা দক্ষিণের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল কালাম আজাদ, বিএনপির বাদল সরদার। এ ওয়ার্ডে আরেক প্রার্থী মো. আক্তার হোসেন। কয়েকটি ওয়ার্ডে আছেন একই দলের একাধিক প্রার্থীও।
সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই আগের কাউন্সিলররা মনোনয়ন পেয়েছেন, তবে দলের প্রতি অবদানের কথা বিবেচনা করে নতুন মুখও এসেছে অনেক ওয়ার্ডে। কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজেদের জন্য ভোট চাওয়ার পাশাপাশি ভোট চাইছেন মেয়রপ্রার্থীদের জন্যও। অনেক স্থানে একই পোস্টারে মেয়রের পাশাপাশি আছে কাউন্সিলরের ছবি আর প্রতীকও।
সিটি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণা চালানোর সুযোগ নেই। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আক্ষেপ করলেও এ বিধি অনুসরণ করে তাদের হেভিওয়েট নেতারা প্রচারণায় নামেননি। তবে সংসদে না থাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এদিক দিয়ে একটু সুবিধা পান। আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দুই দল নির্বাচনে সমানে সমানে মাঠে থাকলেও দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আর কোনো সংঘর্ষ ঘটেনি।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনার পক্ষে চিত্রজগতের নায়ক-নায়িকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবীরা অংশ নিচ্ছেন। দু’দলেরই পোস্টারে রাজধানীর অলিগলি ছেয়ে গেছে। যথারীতি রঙ্গিন পোস্টার ছাপানোর নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে নিউজ প্রিন্ট বর্জিত দেশি সাদা কাগজের দখলে ছিল পুরো ছাপাখানা।
এবারই প্রথম রাজধানীর দুই সিটি নির্বাচনের পুরোপুরি ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণে তথ্যপ্রযুক্তি সচেতন তরুণদের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে শঙ্কাও কম নয়। ইভিএমে কারচুপি হতে পারে এমন অভিযোগ করছে বিএনপি। ইভিএমে ভোট গ্রহণের জন্য প্রতি কেন্দ্রে টেকনিক্যাল পার্সন হিসেবে দু’জন করে সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে, তারাই ইভিএম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন।
আবার ভোট দেওয়ার ব্যাপারে ভোটারদের মধ্যেও আছে নানা প্রশ্ন। অনেকেই বলছেন, পরিবেশের ওপর নির্ভর করছে তাদের ভোট দিতে পারা আর না পারার বিষয়টি। তবে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার। তবে নির্বাচনী বৈতরণী উতরানোর জন্য বরাবরের মতোই অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ দুই সিটি নির্বাচনেও ছিল।
ঢাকা সিটি নির্বাচনে সহিংসতা সৃষ্টি করতে বিএনপি বাইরে থেকে ‘সশস্ত্র গুণ্ডা’ রাজধানীতে এনেছে- এমন অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপির অভিযোগ আওয়ামী লীগের দিকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ ঢাকার বাইরে থেকে কয়েক লাখ কর্মীকে ঢাকায় এনেছে, তাদের অনেকেই অস্ত্রধারী এমন অভিযোগ বিএনপির এ নেতার।
অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই আজ মধ্যরাতে দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হচ্ছে। এরপর প্রার্থীরা তাদের ভাগ্য ভোটারদের হাতে ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের অপেক্ষায় থাকবেন।