সুন্দরী তরুণীদের বিদেশ পাচারকারী চক্রের ৬ সদস্য পাকড়াও

 

নগর প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: চার তরুণীকে বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে একত্রিত করা অবস্থায় মানব পাচারকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

এই পাচারকারী চক্রটি ১৫-২৫ বছর বয়সী তরুণীদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশের বিভিন্ন ড্যান্স বারে পাচার করতো। সেখানে তাদের যৌন পেশায় বাধ্য করা হতো।

 

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে রূপগঞ্জের তারাবো মোড়ের শাহ চন্দপুরী রেস্টুরেন্ট থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় পাচারের উদ্দেশ্যে জড়ো করা ৪ জন তরুণীকে উদ্ধার করা হয়।

 

ময়মনসিংহের ধুপাউড়ার বাসিন্দা মো. অনিক হোসেন (৩১), নোয়াখালীর চাটখিল থানার বাসিন্দা মো. মনির হোসেন (৩০), সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বাসিন্দা মো. আক্তার হোসেন (৪০), চাঁদপুর জেলার কচুয়ার মো. আফতাউল ইসলাম, কুমিল্লার চান্দিনার আ. হান্নান (৫২), মাদারীপুরের মো. আকাশ (২৯)।

 

গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, ৭০ টি পাসপোর্ট, ২০০টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ৫০টি বিমান টিকেট, ৫০টি ট্যুরিস্ট ভিসার ফটোকপি, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর ও ১টি বিলাসবহুল মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। উদ্ধারকৃত পাসপোর্টগুলো বিভিন্ন বয়সী তরুণীদের নামে ইস্যু করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

 

রোববার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র‌্যাব-১১ এর সদর দপ্তরে এক সংবাদি সম্মেলনে স্কোয়াড্রন লিডার মো. রেজাউল হক জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য। তারা ১৫-২৫ বছর বয়সী সুন্দরী তরুণীদের উচ্চ বেতনে বিদেশে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে থাকে। এই পাচারকারী সিন্ডিকেটের সাথে পঞ্চাশের অধিক এজেন্ট, ২০ জনের অধিক পাসপোর্টের দালাল, ২৫ জনের অধিক ড্যান্স বারের মালিক, ৭ এর অধিক ট্র্যাভেল এজেন্সি ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরাও যুক্ত আছে।

 

তিনি আরও জানান, এই নারী পাচারকারী সিন্ডিকেটের এজেন্টরা নিম্নবিত্ত পরিবারের, পোশাক শিল্পের, ব্রোকেন ফ্যামিলির সুন্দর তরুণীদের প্রাথমিকভাবে টার্গেট করে থাকে। টার্গেট করার পর প্রথমে তরুণীদের ছবি বিদেশে অবস্থিত ড্যান্স বারের মালিককে পাঠানো হয়। ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর ড্যান্স বারের মালিক বা তার প্রেরিত প্রতিনিধি সরাসরি উক্ত তরুণীদের নির্বাচনের উদ্দেশ্যে ঢাকা অথবা আশে পাশের কোন রেষ্টেুরেন্টে, হোটেল বা লং ড্রাইভের নামে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাসে সাক্ষাৎ করে থাকে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত তরুণীদের পাসপোর্ট উক্ত নারী পাচারকারী সিন্ডিকেট তাদের নিজস্ব পাসপোর্ট দালালের মাধ্যমে প্রস্তুত করে থাকে। ট্রাভেল এজেন্সীর মালিকের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট ভিসা ম্যানেজ করে ও এয়ারপোর্টের বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এই সকল তরুণীকে মালয়েশিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন পাচার করে থাকে। এই সকল তরুণীরা বিদেশে পৌঁছা মাত্র এয়ারপোর্ট থেকে উক্ত সিন্ডিকেটের সদস্যরা রিসিভ করে হোটেলে নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখে। বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে এই সকল তরুণীকে কোন অবস্থাতেই নিজের ইচ্ছার হোটেল তথা ড্যান্স বারের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। এই সমস্ত ড্যান্স বারগুলোতে পণ্যের মতোই বাংলাদেশ থেকে পাচার করা তরুণীদের আধুনিক স্বল্পবসনের আর সাজসজ্জায় বসিয়ে রাখা হয় এবং মধ্যযুগীয় কায়দায় খদ্দরের পছন্দ অনুযায়ী রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে ৩টা পর্যন্ত নাচ ও যৌন পেশায় বাধ্য করা হয়।

 

র‌্যাবের উর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক অবস্থায় তরুণীরা এ সকল অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে রাজি না হলে বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এভাবে দিনের পর দিন উক্ত তরুনীদের উপর পৈশাচিক নির্যাচন চলতে থাকে। কোন খদ্দরের কোন নির্দিষ্ট তরুণীকে পছন্দ হলে উক্ত ড্যান্স বারের মালিকের নিকট হতে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে কয়েক দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে থাকে। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে পাচারকৃত তরুণীদের উক্ত সিন্ডিকেট আবার বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।

 

র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন জানান, গত এক বছরে এই চক্রটি মবিন এয়ার নামে ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের মোট ৭২৯ জন তরুণীকে দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। এই ট্র্যাভেল এজেন্সির আকাশকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তরুণীদের নামে পাসপোর্ট তৈরি করতো। টুরিস্ট ভিসায় বিভিন্ন মেয়াদে তাদের দেশের বাইরে পাঠানো হতো। বারের মালিক ও খদ্দররা অধিকাংশই বাঙালি। দুবাইয়ের দু’টি বারের মালিক হান্নান ও মনির হোসেনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মানব পাচার বিরোধী আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

 

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com