সিঙ্গাপুরে এক প্রবাসীর সততার গল্প!
প্রতিবেদক প্রেসবাংলা২৪ডটকম: প্রবাসে সততার পরিচয় দিয়ে দেশের নাম উজ্জল করেছেন শরীয়তপুরের রহমত উল্লাহ রাজীব।
রাজীব সিঙ্গাপুরে টাউন কাউন্সিলে গত ৯ বছর যাবত কাজ করছেন ৷ কয়কেমাস আগে তিনি কাজের সাইটে কার র্পাকে ১০ হাজার ডলার সহ মানিব্যাগ কুড়িয়ে পান যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৬ লক্ষ টাকার উপরে । এতগুলো টাকা হাতে পেয়েও লোভ রাজীবকে বশিভূত করতে পারেনি । রাজীব টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্দেশ্যে কার র্পাকে প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টা অপেক্ষা করেন । কিন্তু মালিকের সাথে তার সাক্ষাৎ হলো না।
টাকাটা হাতে নিয়ে বাসায় ফিরে যান ৷ কিন্তু এই টাকার জন্য তার ঘুম হয় না। প্রকৃত মালকিরে কাছে টাকাটা ফেরত দেওয়ার জন্য তিনি অস্থির হয়ে পরেন ৷ তিনি মোবাইল হাতে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন । কারন ব্লকে কিছু হারানো গেলে কেউ হয়তো তার বসকে কল দিবে এবং বস তাকে কল দিয়ে টাকার কথা জিজ্ঞেস করবেন । কিন্তু কারো কল না আসায় মালিকের কাছে টাকা ফরেত দেওয়ার জন্য অস্থির সময় পার করতে থাকনে ৷
এরপর দুইদিন সময় করে কার র্পাকে টাকা হারানো মালিকের সন্ধানে এসে বসে থাকেন ৷ কিন্তু কারো দেখা পান না। উপায়হীন হয়ে অফিসে বসকে টাকা পাওয়ার ঘটনা বলেন। বস তার কথা শুনে অবাক হোন ৷ তিনি বলেন এতগুলো টাকা তুমি কেন ফেরত দিতে চাও? নিজের কাছেই রেখে দাও। কিন্তু রাজীব নাছোড়বান্দা। সে টাকার মালিকের কাছে টাকা ফরেত দিতে চায় ৷
বস পরিশেষে তাকে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে হাজির হলে পুলিশ সব শুনে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ । তিনি বলেন , আমার র্কমজীবনে এই প্রথম কাউকে দেখেছি এতগুলো টাকা ফেরত দিতে । তোমার ১০ মাসের বেতন এই টাকা। এই টাকা দেশে পাঠিয়ে তুমি কিছু করতে পারতে । কিন্তু তুমি তা না করে ফেরত দিতে আসছো । তোমার সততাকে স্যালুট জানাই ৷
পুলিশ টাকার সাথে থাকা পরিচয় পত্র থেকে টাকার মালিকের নাম্বারে কল দেন কিন্তু কেউ কল রিসিভ করে না। দ্বিতীয় নাম্বারে কল দিলে একজন মহিলা কল রসিভ করে জানায় সে টাকার মালিকের বোন ।
পুলিশের কাছে সব শুনে মহিলা কেঁদে ফেলেন । তিনি জানান, এই টাকা তার ভাই সংগ্রহ করছিল তার মায়ের চিকিৎসা করানোর জন্য । টাকা হারানোর পর ভাই আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে । ভাই ভেবেছে আমি তার টাকা চুরি করেছি । শুধু এই টাকার জন্য ভাই বোন একে অপরের শত্রু হয়ে গিয়েছিল।
রাজিব এই কথা শুনে আনন্দে কেঁদে তার অনুভব হতে থাকে জীবনে এক জনের আনন্দের কারণ হতে পারলাম । সে বলে এই আনন্দ টাকা দিয়ে কিনা যায় না ।
পরের দিন পুলিশ স্টেশনে এসে টাকার মালিক রাজিবের কাছে টাকা বুঝে পেয়ে তাকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে । তার চোখমুখে আনন্দ দেখে রাজীর খুব খুশি হন । সে ভাবে কোটি টাকা দিয়েও এই সুখ পাওয়া যায় না । অপরের মুখে হাসি ফুটানো আসলেই খুব আনন্দের আর সেই সুখের পিছনে যখন আপনি তখন পৃথিবীর সকল সুখানুভূতি অনুভব করবেন ।
রাজীরের সততার পুরস্কার স্বরূপ টাউন কাউন্সিলর এর পক্ষ থেকে সততার সাটিফিকেট তুলে দেন টেস্ট মিনিস্টার হেংচীহাউ ।
রহমত উল্লাহ রাজীব শরীয়তপুর জেলাধীন জাজিরা থানার গফুর মোল্লার কান্দি গ্রামের বাসিন্দা । তার বাবার নাম আব্দুল মোতালেব মোল্লা । তারা দুই ভাই ও এক বোন ।
এ ব্যাপারে রাজীবের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ভাই টাকা পয়সা আজ আছে কাল নাই । কিন্তু আমি এই যে তাদের মুখে হাসি ফুটাতে পারলাম এটাই আমার জীবনের সেরা অর্জন । আমি মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই । অন্যের মুখে হাসি ফুটাতে চাই । এর আগেও আমি একজনকে ৫০ গ্রাম স্বর্ণ ফিরিয়ে দিয়েছিলাম ।
এ ঘটনায় তাকে ৪শত ডলার পুরস্কৃত করা হয় এবং তাকে বাংলাদেশী হিরো হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
(উমর ফারুক শিপনের ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত)