উচ্ছেদেও বহাল মনির হোটেল!

নগর প্রতিনিধি, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: নারায়ণগঞ্জে রেলের জমিতে উচ্ছেদ অভিযান চললেও নগরীর দুই নম্বর গেটের আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর মনির হোসেনের মালিকানাধীন মনির হোটেল বহাল তবিয়তে রয়েছে। দুইদিন অভিযানে অবৈধ বেশির ভাগ অবৈধ দখল উচ্ছেদ হলেও কোন কোন স্থাপনা এখনো বহাল তবিয়তে আছে ।

 

এর মধ্যে জয়নাল ট্রেড সেন্টাররের কিছু অংশ যা পূর্বে উচ্ছেদের সময় ভাঙ্গা হয়েছিল। ২নং রেলগেইট এলাকায় মনির হোটেলকে না ভেঙ্গে ৩দিনের সময় দেওয়ার পর সেই সময় অতিবাহিত হলেও হোটেলটি এখনো পর্যন্ত উচ্ছেদ করা হয়নি ।

 

স্থানীয় ব্যাবসায়ীরা বলে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানকে আমরা স্বাগত জানাই কিন্তু ক্ষমতাবানদের জন্য এক নিয়ম আর সাধারণ ব্যবসায়ীদের জন্য আরেক নিয়ম এটা আমরা মেনে নিতে পারি না ।

 

স্থানীয় এক থান কাপড় ব্যাবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, লীজ নেওয়া এই জায়গাগুলোতে গড়ে উঠা দোকান আমরা টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিয়ে ব্যাবসা করে আসসি কখনো ভাবিনি এমন ভাবে ভেঙ্গে দেওয়া হবে । তারপরও উন্নয়ণের জন্য সরকার অবৈধ জমি উৎখাত করবে কিন্তু একজনেরটা ভাঙ্গবে আর আরেকজনেরটা বহাল থাকবে কর্তৃপক্ষের এ দৈত নীতি কেন? আইন সবার জন্য সমান কিন্তু এখানে সাধারণ মানুষের জন্য এক নীতি আর ক্ষমতাবানদের জন্য আরেক নীতি এটা কোন ভাবেই কাম্য নয়।

 

১নং রেললাইন এলাকায় প্রায় ৯০০ অবৈধ স্থাপনা এবং ২নং রেলগেট এলাকা থেকে রেললাইনের দুইপাশে প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকার পূর্ব দিকে ২৮ ফুট এবং পশ্চিম দিকে ৪৫ ফুট পর্যন্ত অবৈধ জায়গা দখলদারদের কাছ থেকে উচ্ছেদ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের দুইনং রেলগেট থেকে উকিলপাড়া পর্যন্ত রেললাইনের দু’পাশে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিশাল জায়গার মধ্যে গড়ে উঠেছিলো বাংলাদেশের বৃহত্তম থান কাপড়ের মার্কেট।

 

প্রথমে ১৯৯০ সনের দিকে একটি জলাশয় বালু দিয়ে ভরাট করে ছোট পরিসরে থান কাপড়ের ব্যবসার সূচনা হলেও এরপর বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমির লিজ নিয়ে, সেই জায়গায় দোকান তৈরি করে থান কাপড়ের ব্যবসা পরিচালনা করত প্রায় ৫০০ জন ব্যবসায়ী। আর ২০১৯ সাল নাগাদ মার্কেটটিতে নিবন্ধিত ব্যবসায়ীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজারের বেশি এবং ব্যবসায়ী ও কর্মচারী নিয়ে সর্বমোট ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয় এখানে।

 

কিন্তু রেলওয়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে গুঁড়িয়ে দেয়া হলে থান কাপড়ের এই পুরনো মার্কেটের বহু ব্যবসায়ী একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়। কর্মসংস্থান হারায় হাজারো লোকজন। স্বপ্ন ভঙ্গ হয় অনেকের।

রোববার (২০অক্টোবর) আমাদের প্রেসবাংলা প্রতিনিধি সরেজমিনে গিয়ে দেখে, দুই নং রেলগেট থেকে উকিলপাড়া পর্যন্ত রেললাইনের দুপাশে’র প্রায় ৮০ ফুট জায়গার মধ্যে গড়ে উঠা সকল অবৈধ দোকান গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

 

এসময় কথা হয় মোক্তার হোসেন নামে এক থান কাপড়ের ব্যবসায়ীর সঙ্গে। উচ্ছেদের সময় তাঁর নিজের একটি দোকান ভেঙে দেয়া হয়। তিনি বলেন, ৩ বছর আগে নগরীর দিগুবাবুর বাজারের সবজির আড়ত ছেড়ে দিয়ে ১৪ লাখ টাকায় অন্য এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দোকান ক্রয় করে এখানে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি। তখনও জানা ছিলোনা যে এইদিকে উচ্ছেদ হবে।

ভেবেছিলাম এখানে ব্যবসা করে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মতো আর্থিকভাবে আরো সাবলম্বী হতে পারবো কিন্তু রেলওয়ে দোকান ভেঙে দেয়ার পর একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।

 

অনেকের এখন অভিযোগ, উকিলপাড়া থেকে দুই নং রেলগেট পর্যন্ত দুইপাশের সকল দোকান ভেঙে দেয়া হলেও রহস্যজনক কারণে ভাঙা হয়নি রেলওয়ে মার্কেটের একেবারে প্রথম সারিতে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা মনির রেস্তোরা।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, থান কাপড়ের মার্কেটে উচ্ছেদ চলাকালে পূর্ব দিক থেকে ২৮ ফুট ও পশ্চিম দিক থেকে ৪৫ ফুট করে গুঁড়িয়ে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে পূর্ব দিকে মনির রেস্তোরা ও হোসেন ট্রেডার্স বাদ দিয়েই সকল দোকান ভাঙা হয়।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক থানকাপড়ের ব্যবসায়ী বলেন, মনির রেস্তরার মালিক নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির ও তাঁর ভাই হোসেন মিয়া (হোসেন ট্রেডার্সের মালিক) উচ্ছেদ চলাকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রেলওয়ের উপ-সচিব নজরুল ইসলামের সাথেই ছিলো।

এ সময় নাকি তাঁদেরকে তিন দিনের সময় দেয়া হয় দোকান সরানোর জন্য কিন্তু এই মার্কেটের অধিকাংশ দোকান ভেঙে ফেলা হলেও মনির রেস্তোরাসহ আরো বেশ কয়েকটি দোকানদারকে সময় দেয়া হলো। আমাদের কোন সময় দেয়া হয় নাই।

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com