না’গঞ্জে বেপরোয়া ছাত্রলীগ!

বিশেষ প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: নারায়ণগঞ্জে বেপরোয়া হয়ে উঠছে ছাত্রলীগ। একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগের এই ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। ছাত্রলীগের এই কর্মকা-ে খোদ বিব্রত আওয়ামী লীগ। সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজিই শুধু নয়, গণমাধ্যমকর্মীদের উপর হামলা-মামলা করে সম্প্রতি আবারো ছাত্রলীগের নেতিবাচক কর্মকা- ডালপালা ছড়াতে শুরু করেছে। জেলা ছাত্রলীগ ও মহানগর ছাত্রলীগই নয়, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি মামলায় ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছেন। তাদের এ বেপরোয়া কর্মকান্ডের বিষয়ে অনেকের মন্তব্য-‘সব খেয়ে ফেলতে চায় ছাত্রলীগ’। তাদের এই ‘খেয়ে ফেলার’ মনোবৃত্তিতে আওয়ামী লীগের অনেক অর্জন মিইয়ে যাচ্ছে।

 

গত ২৮ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ সরকারী তোলারাম কলেজে প্রেসনারায়ণগঞ্জ নামের স্থানীয় একটি অনলাইন নিউজপোর্টালে কর্মরত সাংবাদিক সৌরভ হোসেন সিয়ামকে কলেজের ভেরতেই বেদম মারধর করে মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা। এ ঘটনায় আহত সৌরভ বিকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনও করেন। সংবাদ সম্মেলনে সৌরভ অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক পিয়াস প্রধান, সহ সম্পাদক শেখ হাবিবুর রহমান তামিম, উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক মেহেদী হাসান প্রিন্স, শাহরিয়ার পরশ ওরফে হৃদয়, স্বার্থক আহমেদ তোফাসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জন তাকে মারধর করে। এর আগেও ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল মহানগর ছাত্রলীগের ক্যাডাররা সৌরভকে কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সংসদের ভেতরে আটকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছিল। পরে অধ্যক্ষের রুমে নিয়ে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

 

স্থানীয়দের মতে, ছাত্রলীগের অপকর্মের প্রতিবাদ বা সমালোচনা করলেই তাদের আক্রোর শিকার হতে হয়। হামলা-মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষের মুখ বন্ধ করার স্বৈরশাসকীয় ভূমিকায় নেমেছে ছাত্রলীগের নেতারা। স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে ছাত্রলীগের অপকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন হবার পরে মামলার পথেও নামে তারা।

 

কিন্তু ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা সরাসরি সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতেই একটি অনুষ্ঠানে ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নানকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে স্থানীয় পঞ্চায়েতের নেতারা।

 

শুধু তাই নয়, চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামকে । গত ২৪ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ফতুল্লার কোতোয়ালের বাগ এলাকার হায়াত আলী নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি ও ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেবার অভিযোগ রয়েছে।

 

গত ২৭ সেপ্টেম্বর ফতুল্লার মুসলিমনগর নয়াবাজার এলাকার জুয়েল রানাকে গ্রেফতার করে। জুয়েল রানা নিজেকে থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পরিচয় দিতো। জুয়েল রানা ছাত্রলীগ নেতা মান্নানের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড বলে এলাকায় পরিচিত।

 

এ বিষয়ে ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মো: শরীফুল হক প্রেসবাংলাকে বলেন, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ বিচ্ছিন্ন এবং ব্যক্তিগত। কোন ব্যক্তির অপকর্মের দায় তো সংগঠন নিতে পারে না। তাছাড়া জেলা ও মহানগরের নেতাদের বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।

 

এ বিষয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সরকারী তোলারাম কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের ভিপি হাবিবুর রহমান রিয়াদ প্রেসবাংলা’কে বলেন, যদি ছাত্রলীগের পদধারী কোন নেতাকর্মী কোন অপকর্মে জড়িত থাকে, এবং তদন্তে তা প্রমাণিত হয় তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্রলীগে কোন অপকর্মকারীর স্থান নেই। কারণ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগের সংগ্রাম ও ত্যাগের ইতিহাসে সমৃদ্ধ একটি সংগঠন।

 

সরকারী তোলারাম কলেজে সাংবাদিক সৌরভকে মারধরের ঘটনাটি ইতিমধ্যে মীমাংসা হয়ে গেছে উল্লেখ করে রিয়াদ বলেন, এ ঘটনাটি যদিও তাদের ক্লাশমেটদের নিজস্ব ঘটনা। কিন্তু এর সাথে ছাত্রলীগকে অহেতুক জড়ানো হচ্ছে।

 

চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাদের প্রসঙ্গে বলেন, কোন নেতাকর্মীর ব্যক্তিগত অপরাধের দায় সংগঠন নিবে না। যদি সে কোন অপরাধ করে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার হবে। ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নানকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরা ১৪ বছর আগে গঠন করা কমিটির নেতা। নতুন কমিটি হলে এ ধরণের কোন লোকের স্থান হবে না।

 

এ বিষয়ে ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান প্রেসবাংলাকে বলেন, আমি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আমি সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজিতে সম্পৃক্ত নই এবং কোন সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজকে প্রশ্রয়ও দেই না।

 

 

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com