প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: আবারও তদন্ত হচ্ছে বক্তাবলীর কানাইনগর ছোবহানীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে আনিত দূর্নীতির অভিযোগের। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সদর উপজেলার একাডেমীক সুপারভাইজার স্বাক্ষরিত একটি পত্রে মঙ্গলবার তদন্তের বিষয়টি জানানো হয়েছে। এর আগেও চলতি বছরের ১২ মার্চ একই অভিযোগে তদন্ত করেন জেলা শিক্ষা অফিসার শরীফুল ইসলাম। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সে তদন্তের প্রতিবেদন গতকাল পর্যন্তও জমা হয়নি।
সদর উপজেলার একাডেমীক সুপারভাইজার এইচ এম এ মালেক ওই পত্রে অভিযোগকারী সাইদুর রহমান ও অভিযুক্ত শিক্ষককে মঙ্গলবার সকাল দশটায় বক্তাবলী ইউনিয়ন পরষিদ কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছেন।
এর আগে ২০১৮ সালে ৪ জুলাই তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল বারী আকস্মিক স্কুল পরিদর্শনে আসার খবর পেয়ে নিজ কক্ষে তালা মেরে পালিয়ে গেলেন গিয়েছিলেন দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কানাইনগর ছোবহানীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন। ওইদিন স্কুলের দৈনন্দিন হাজিরা-খাতা, স্কুলের অবকাঠামো ও আনিত অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেন। তিনি শিক্ষক, এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও এলাকার গণমান্যদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেন।
আমজাদ মাস্টারের দূর্নীতিতে রূপকথাকেও হার মানায়::
‘যে শিক্ষক মানুষ গড়ে/ সে কী আবার দুর্নীতি করে?’-এ স্লোগানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এ প্রশ্নের উত্তর-ই শুধু দেননি স্থানীয়দের বিস্মিত করেছেন কানাইনগর ছোবহানীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন। ৯ বছরের মেয়াদকালে তাঁর দুর্নীতির খতিয়ান যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানায়।
স্কুলটির সাবেক শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে দুর্নীতির এ মহাকাণ্ড! অনিয়ম দূর্নীতি শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি তাঁর মেয়দকালে ৩ কোটি ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার ১ শত ৬৭ টাকা দূর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।
এ কারণে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেনের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্নখাতে তাঁর দুর্নীতির খতিয়ান জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি তুলেছেন-বিদ্যালয়ের ১৯৯৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। এ দাবিতে এলাকায় বেশ কয়েক মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে ’৯৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের দেয়া তথ্যমতে, আমজাদ হোসেন স্কুলের পূন:ভর্তি বাবদ ৩২ লক্ষ ৭৬ হাজার, বিলম্ব অনুপস্থিত বাবদ ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা, খেলাধুুলা খাতে ৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা, নির্মাণ খাতে ৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, গ্রায়াচুটি বাবদ ১২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৮ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা, মিলাদ বাবদ ৮ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা, দূস্থ: তহবিলের ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা, পাঠাগারের ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা, গবেষণার ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা, সাংস্কৃতিক খাতে ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা, স্কাউটের ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, উন্নয়নের ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, কম্পিউটারের ৬ লক্ষ ৩০ হাজার, মসজিদ ফান্ডের ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, অগ্রগতি পত্র বাবদ ৫লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা, মনোগ্রাম বাবদ ৫ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা, এসএসসি পরিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরন বাবাদ অতিরিক্ত ২৮ লক্ষ ৩ হাজার ১ শত ৬৭ টাকা, কৃষি ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা বাবদ ৮ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, উপবৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র ছাত্রীদের সরকারি অনুদানের ৫ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ করেন। এর প্রমাণ হিসেবে স্কুলের রশিদ ও ব্যাংক এ্যাকাউন্ট সহ নানা তথ্য-উপাত্ত্ব তুলে ধরা হয়।
বক্তাবলী ইউনিয়ন মাদক নির্মুল কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, অর্থের বিনিময় অযোগ্য, দলীয় লোকদের নিয়োগ দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেওয়া হয়েছে। তিনি অযোগ্যদের বাদ দিয়ে মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানান। এছাড়াও বিভিন্ন সময় স্কুলের দূর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম বলেন, আমজাদ হোসেন একা দূর্নীতি করেন নাই। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনিই মূল, এর দায় এড়াতে পারেন না। আমরা অভিযোগের সুষ্ঠ তদন্ত প্রতিবেদন আশা করছি। এরপর বিভিন্ন সময়ে দূর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধেও আমরা মাঠে নামব।