নূর হোসেনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আসেনি কেউ

প্রতিবেদক, প্রেসবাংলা২৪ডটকম: অস্ত্র ও চাদাঁবাজিসহ মোট ৮টি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন আলোচিত সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন। তবে, মামলাটির স্বাক্ষী ও বিচারক উপস্থিত না থাকায় শুনানী হয়নি। তাই আগামী ১ অক্টোম্বর মামলার পরবর্তী হাজিরার দিন ধার্য করা হয়েছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) সকালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শেখ রাজিয়া সুলতানার আদালতে হাজিরা দিতে আসেন। কিন্তু বিচারক ও নুর হোসেনের বিপক্ষে কোন স্বাক্ষী না থাকায় ১ অক্টোম্বর মামলার পরবর্তী হাজিরার দিন ধার্য করা হয়েছে।
এর আগে কড়া পুলিশ নিরাপত্তায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে নুর হোসেনকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। হাজিরা শেষে নূর হোসেনকে আবার জেল হাজতে পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহরণ করা হয় নজরুল, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবি চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমকে।
৩ দিন পর ৩০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া শান্তি নগর এলাকা থেকে তাদের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন একই জায়গা থেকে উদ্ধার হয় নজরুলের আরেক বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ। সব লাশের পেটে ছিল আঘাতের চিহ্ন। প্রতিটি লাশ ইটভর্তি বস্তায় বেঁধে নীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এঘটনায় নজরুলের শ্বশুড় অভিযোগ করেন, র্যাবের তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা ও মেজর আরিফ হোসেন ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে এ সাতজনকে অপহরণের পর খুন করে।
এরপর ২০১৪ সালের ১১ মে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, সদস্য মাহবুবুর রহমান ইসমাইল ও চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পালের রিট আবেদনে হাই কোর্ট তিন র্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। নির্দেশের পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১৫ মে পুলিশকে চিঠি দিয়ে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিওর (সিআরপিসি) অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলে।
ওইদিন রাতেই মিলিটারি পুলিশের সহায়তায় ঢাকা সেনানিবাসের বাসভবন থেকে তারেক সাঈদ ও মেজর আরিফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ। পরদিন রাতে নৌ-বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা মাসুদ রানাকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশের কাছে তুলে দেয়।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে পুরো ঘটনা। এ ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন। ঘটনার পর নূর হোসেন পালিয়ে ভারত গেলে ওই বছরের ১৪ জুন কলকাতার মম বিমানবন্দর সংলগ্ন বাগুইআটি থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
পরে ২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তাকে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৪ নভেম্বর তাকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে জেল হাজতে পাঠায়।
এদিকে এ হত্যা মামলাটি তদন্ত করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৫ জনকে আসামি করে ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠন করে আদালত।
গত ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও ায়রা জজ সৈয় এনায়েত হোসেন আদালতে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলায় সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও সাবেক তিন র্যাব কর্মকর্তাসহ ২৬ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। মামলায় ৩৫ আসামির মধ্যে বাকি নয়জনকে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা উচ্চ আালতে আপিল করলে হাইকোর্ট নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার রায়ে কাউন্সিলর নুর হোসেন এবং সাবেক র্যাব অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ ১৫ জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ বহাল রাখেন। বাকি ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। এছাড়া ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডের রায় হাইকোর্টেও বহাল রয়েছে।
গত ১৯ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলায় ১ হাজার ৫৬৪ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়। রায় প্রদানকারী বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম রায়ে স্বাক্ষর করেন। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর চলতি বছরের ৩ মার্চ মৃত্যুদন্ডাদেশ থেকে খালাস চেয়ে হাই কোর্টের রায়ের বিরূদ্ধে আপিল করেছেন দন্ডপ্রাপ্তরা।